রোজায় সুস্থ থাকার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
রমজান সিয়াম সাধনার মাস হলেও এ মাসেই যেন খাবার মহোৎসব শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। এ সময় ভাজাপোড়া খাবারে বেশি আগ্রহ দেখা যায়। সারাদিনের রোজার পর প্রতিদিন পিঁয়াজুসহ যে কোনো ধরনের চপ না হলে যেন ইফতারে পূর্ণতা আসে না। এগুলো খেতে ভালো লাগলে শরীরের অনেক ক্ষতি করে। তাই যতটা সম্ভব এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। এ সময় প্রাধান্য দিন স্বাভাবিক খাবারকে।
এবার রমজানে সুস্থ থাকার খাদ্যাভাস জানিয়ে দিচ্ছে অর্থসূচক:
এক. এ সময় ভাজা ও ফ্যাটজাতীয় খাবার একবারেই খাবেন না। কারণ এ ধরনের খাবার পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে। ইফতার ও রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পানি ও ফলের জুস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হবে।দুই. রাতের খাবারে বা সেহরিতে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার খান। যেমন- ভাত, রুটি ইত্যাদি। এগুলো আপনাকে সারাদিন কর্মক্ষম রাখবে।
তিন. আঁশজাতীয় খাবার খেতে পারেন। এটা পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করবে। যেমন- ডাঁটা তরকারি, কচুরলতি ইত্যাদি।
চার. পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামজাতীয় খাবার খেতে পারেন। যেমন- মাছ। এছাড়া মাংসও খেতে পারেন। তবে খাবারের পরিমাণ যেন আপনার শরীরের চাহিদা থেকে বেশি হয়ে না যায়।
পাঁচ. কলায় কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে। তাই ইফতারিতে একটি কলা রাখুন।
ছয়. চা বা ক্যাফেইনজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ঠিক নয়। যাদের এ ধরনের খাবারের অভ্যাস রয়েছে তাদের রোজা থাকাকালীন মাথাব্যথা, দুর্বল এবং ঝিমুনি ভাব আসতে পারে। তাই রোজার আগে থেকেই ক্যাফেইনজাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়।
সাত. সেহরিতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ডিম, তারপর যেকোনো প্রকার ডাল, খিচুড়ি, অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানী, তেহারি, লেবু, কোমল পানীয় এবং ফাস্টফুড।
নিজের এবং পরিবারের সুস্থতার জন্য এসব খাবার সেহরিতে এড়িয়ে চলুন এবং রমজানে সুস্থ থাকুন।
আর যাদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে এ সুযোগে তা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এতে সুস্থ থাকার পাশাপাশি অর্থও বাঁচবে।
রমজানে কী খাবেন, কী খাবেন না
সারাদিন অনাহারের পর ইফতারে সময় অনেক বেশি তেল জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই ইফতারের তালিকায় সঠিক খাবার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, রমজান মাসে ধীরে হজম হয় এমন আঁশযুক্ত খাবার এবং অনেক তরল খাবার খাওয়া উচিৎ।
কী খেতে হবে এবং কীভাবে খেতে হবে
যেসব খাবার তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই পরিপাক হয়ে যায় সেগুলো না খেয়ে সেহেরিতে ধীরে হজম হয় অর্থাৎ আট ঘণ্টার বেশি সময় পাকস্থলীতে থাকবে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ। চাল, ডাল এবং বীজ যেমন বার্লি, গম, যব, বজরা, পাস্তা, শিম, মসুর ডাল, আটা, লাল চালের মতো খাদ্যশস্য ধীরে পরিপাক হয়।
এছাড়া আঁশযুক্ত খাবার যেমন: ইছবগুলের ভুসি, গম, খাদ্যশস্য ও বীজ, সবজি যেমন: সবুজ শিম, মটর, পালং শাক, গাজর, খোসাযুক্ত ফল, শুষ্ক ফল, খুবানি, আলুবোখারা, কাঠবাদাম বেশি করে খাওয়া উচিৎ।
রমজানে আপনার খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার নিশ্চিত করুন। যেমন: রুটি, শস্যজাতীয় খাবার, দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে শুরু করে মাছ, গরুর মাংস এবং মুরগির মাংস রাখুন।
তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খেলে সেটি শরীরে বেশি পানি ধরে রাখবে। এতে করে পেট মোচড়াতে পারে। অন্যদিকে বেশি মসলাদার খাবার খেলে বেশি বেশি পানির পিপাসা লাগবে। ফলে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এবং মসলাদার খাবার পরিহার করুন।
যা পান করবেন:
শরীরে পানিস্বল্পতা দূর করতে ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন (কমপক্ষে আট গ্লাস)। অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন: কফি, চা, চকলেট, সোডা এবং পান থেকে বিরত থাকুন। সেহেরির সময় কখনোই চা খাবেন না। কারণ, চা প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের লবণ বের করে দেয়, রেচন বাড়িয়ে দেয়। রোজা থাকলে সারাদিন শরীরের জন্য ওই লবণ খুবই প্রয়োজনীয়।
সেহেরিতে যা আবশ্যই খাবেন
ভোররাতের সেহেরি শরীরের জন্য খুবই দরকারি। কিন্তু অনেকেই ভোররাতে সেহেরি না খেয়ে রাতের খাবারটাই একটু বেশি রাতে খেয়ে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত ঘুমান এবং রোজা রাখেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
অবশ্যই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানো উচিৎ এবং ভোররাতেই সেহেরি খাওয়া উচিৎ। তবে সেহেরিতে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। শর্করা ও আমিষ আছে এমন খাবার বেশি খাবেন। ফল ও শাকসবজি বেশি করে খাবেন। সেই সঙ্গে প্রচুর পানি পান করবেন।
রমজানে আরো যা যা করবেন:
ঠাণ্ডা/ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। দিনের যে সময়টাতে প্রখর রোদ থাকে সেসময় অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা জায়গায় ঘরের ভেতরে বা ছায়ায় থাকুন। এবং কায়িক শ্রম কম করুন।
ইফতারিতে হালকা খাবার দিয়ে রোজা ভাঙুন। হালকা খাবারটি হতে পারে স্যুপ। তবে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না এবং কয়েক গ্লাস শরবত পান করুন।
হালকা ব্যায়াম করুন
অনেকেই মনে করেন রোজা রেখে কোনো রকম ব্যায়াম করা উচিৎ নয়। কিন্তু এটি ঠিক নয়। রমজান মাসে প্রতিদিনিই হালকা ব্যায়াম করা উচিৎ। তবে সেটি অবশ্যই হালকা ব্যায়াম হতে হবে যেমন, বিকেলে ৩০ মিনিট হাঁটা।
অন্যান্য টিপস:
সেহেরির পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করুন এবং দিনে বার বার মেসওয়াক করুন। এসময় পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন অর্থাৎ ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন। যদি কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হয় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Post a Comment
Thanks For Comments