কিভাবে মাটন বিরিয়ানি তৈরি করবেন
বলা বাহুল্য যে, প্রতিদিন রাত্রী সারা দুনিয়া থেকে বাংলাভাষাভাষী বন্ধুদের আগমনে আমাদের এই সাইট ধন্য। বলা যেতে পারে আপনাদের এই আসা যাবার জন্য আমাদের ‘গল্প ও রান্না’ সাইট কখনোই ঘুমায় না! আপনাদের সঙ্গী হয়ে আমরাও জেগে থাকি সারা দিন রাত্র! পাঠক পাঠিকা শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু বান্ধব সবাইকে আবারো শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ, আপনাদের সময় কাটুক আনন্দে এবং ভাগ্যে জুটুক ভাল ভাল মজাদার খাবার!
চলুন এই হিট উপলক্ষে একটা চ্রম রান্না হয়ে যাক। অতীতে এমন রান্না কয়েকবার দেখালেও এই রান্না একেবারে আইন মেনে করা হয়েছে! হায়দ্রারাবাদী মাটন বিরিয়ানী, যাকে আমরা কাচ্চি বিরিয়ানী বলে থাকি। তবে আরো কিছু নানান পদের মশলাপাতি এই রান্নায় দেয়া হয়,
যা আমরা দেই নাই, সহজলভ্য নয় বলে। আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনি দিতে পারেন, ব্যাপার না! চলুন দেখে ফেলি!
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– খাসীর গোসতঃ ৭০০ গ্রাম (বড় টুকরা করে কাটা বা ছোট)
– কালি জিরা চালঃ পনে এক কেজি (বাসমতী চালও নিতে পারেন)
– আলুঃ ২৫০ গ্রাম, বড় কাট (ভেঁজে নিতে হবে, ছবি দেখুন)
– পেঁয়াজ কুচিঃ হাফ কাপের বেশী (ভেঁজে রেরেস্তা করে নিতে হবে)
– আদা বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
– রসূন বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
– জিরা বাটাঃ ১ চা চামচ
– ধনিয়া বাটাঃ ১ চা চামচ (এটা গরম মশলার সাথে বাটা হয়েছিল)
– গোল মরিচ গুড়াঃ এক চিমটি (না থাকলে নাই)
– দারুচিনিঃ ৩/৪ টুকরা
– এলাচিঃ ৪/৫ টা
– পুস্তদানাঃ এক চিমটি
– জয়ফলঃ একটার ১০ ভাগের এক ভাগ
– জয়ত্রীঃ এক চা চামচ হয় এমন
– তেজপাতাঃ ২/৩ টা (না থাকলে নাই, আমাদের ছিল না)
– বাদাম বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
– মরিচ গুড়াঃ হাফ চা চামচ
– হলুদ গুড়াঃ হাফ চা চামচ
– কাঁচা মরিচঃ ঝাল বুঝে পরিমান মত (গোটা)
– টক দইঃ এক কাপ (ঘরে পাউডারের দুধে ভিনেগার দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন)
– ঘিঃ এক টেবিল চামচ (থাকলে ভাল)
– লবনঃ পরিমান মত
– তেলঃ হাফ কাপ বা তার বেশী (ভাঁজা ভাঁজিতে কিছু তেল যাবে আরো)
– পানি/গরম পানিঃ প্রয়োজনে লাগলেই দেয়া হবে, হাতের কাছে রাখুন।
- কিসমিসঃ ২/৩ তোলা কম বেশী
- কাজু বাদামঃ ২/৩ তোলা কম বেশী
- আলু বোখারাঃ ৮/১০ টা
- কাঁচা মরিচঃ আস্ত ১০ টা
- দুধঃ এক কাপ (সামান্য খাবার রঙ মিশিয়ে, রঙ না থাকলেও চলবে, সেই ক্ষেত্রে চাল সাদা থাকবে, এই যা)
- আটার কাইঃ পরিমান মত, যা লাগে।
প্রস্তুত প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)কিছু টুকটাক কাজ কর্মঃ
ছবি ১, খাসির গোশত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে একটা হাড়িতে রাখুন এবং তাতে টক দই দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন।
ছবি ২, এবার সেই গোস্তে একে একে সব মশলাপাতি দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে ঘন্টা খানেক সময়ের জন্য মেরিনেটেড করে রেখে দিন। লবন দিতে ভুলবেন না (এক চা চামচ তো লাগবেই)! তবে কম, পরে ফাইন্যাল লবন দেখে দেয়া যাবে।
ছবি ৩, এমনি মশলাপাতি গোস্তে প্রবেশ করবে।
ছবি ৪, কিছু বেরেস্তা করে রাখুন।
ছবি ৫, কিছু আলু ভেঁজে তুলে রাখুন।
ছবি ৬, বাদাম কুঁচি, কাঁচা মরিচ, কিসমিস ও কিছু আলুবোখারা এভাবে আগেই কাজের ফাঁকে যোগাড় করে নিতে পারেন।
ছবি ৭, চাল ধুয়ে হাফ সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে রাখুন।
ছবি ৮, এককাপ দুধে সামান্য খাবার রং (হলদে) মিশিয়ে রাখুন।
ছবি ৯, ফাঁক পেলে এক কাপ বা বেশি কম আটার কাই করে রাখতে ভুলবেন না!
এবার আসুন মুল রান্না ও প্রিপারেশনেঃ
ছবি ১০, যে হাড়িতে বেরেস্তা করেছেন সেই হাড়িতে আরো কিছু তেল দিয়ে এবার মেরিনেটেড করে রাখা গোশত দিয়ে রান্না শুরু করুন।
ছবি ১১, আগুন মাঝা মাঝি থাকবে।
ছবি ১২, ডেকে দিন। এবার হাতের অন্যান্য কাজ থাকলে তা করুন (উপরের ছবি গুলো দেখুন!)
ছবি ১৩, মাঝে ঢাকনা তুলে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না! আগুন মাঝারি আঁচে, যাতে গোশত নরম হয়ে যায়। চুলার ধার ছেড়ে যাবেন না। চুলার ও রান্নার দিকে খেয়াল রাখবেন।
ছবি ১৪, ব্যস, বিরিয়ানীর গোশত রান্না শেষ!
ছবি ১৫, এবার গোস্তে আলু ভাঁজি গুলো দিয়ে দিন।
ছবি ১৬, মিশিয়ে নিন, আগুন মাঝারি, একটু বেশি সময় লাগবে। এই পর্যায়ে ফাইন্যাল লবন দেখুন, ঝোল কিছুটা কটা হতে হবে। লবন লাগলে দিন, না লাগলে আগে বাড়ুন।
ছবি ১৭, এবার কিছু রেরেস্তা, কিসমিস, বাদাম কাট ও কয়েকটা আলু বোখারা ছিটিয়ে দিন। কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে ভুলবেন না!
ছবি ১৮, এবার এক পরত হাফ সিদ্ধ করে রাখা চাল দিন।
ছবি ১৯, এই পরতের উপর আবারো কিছু রেরেস্তা, কিসমিস, বাদাম কাট ও কয়েকটা আলু বোখারা, কাঁচা মরিচ ছিটিয়ে দিন।
ছবি ২০, এবার সামান্য হলদে রঙ্গে মিশিয়ে রাখা এক কাপ দুধ মাঝামাঝি বা কোথায় কোথায়ও ঢেলে দিন।
ছবি ২১, যে জায়গা গুলোতে এই হলদে রং এর দুধ পড়বে সেই অংশের চাউলের রং হলদে দেখাবে।
ছবি ২২, এবার ঢাকনা দিয়ে দিন। আগুন মাঝারি থাকবে।
ছবি ২৩, আগে ফাঁকে করে রাখা আটার কাই দিয়ে ঢাকনা এভাবে বন্ধ করে দিন।
ছবি ২৪, চুলার উপরে এভাবে একটা তাওয়া দিয়ে দিতে পারেন, এতে আগুনের তাপ হাড়িতে লাগবে কিন্তু সহজে খাবার পুড়বে না।
ছবি ২৫, আগুনের অবস্থা ভেদে ৪০ মিনিটের মত লাগবে, তবে একটু সময় বেশি লাগলে সমস্যা কি, আগুন মাঝারি আঁচেই থাকুক।
ছবি ২৬, ঢাকনা খুলে নিলে এই রকম দেখাবে।
ছবি ২৭, এক সাইড থেকে তুলে পরিবেশন করুন।
ছবি ২৮, ক্যামেরার ভাল না থাকার জন্য ছবি গুলো ভাল তোলা যায় নাই। মাইক্রোসফট লুমিয়া সিরিজের ফোনে তোলা এই ছবি গুলো খাবারের রং রূপ ভাল দেখাতে পারে না, পাশাপাশি আলো স্বল্পতা ছবি তোলার সময়ে বোঝা যায় না! দুঃখিত, খাবারের সঠিক রংটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারলাম না।
ছবি ২৯, নিজের জন্য এভাবে তুলে নিতেও পারেন।
ব্যস, এই তো হয়ে গেল, হায়দ্রাবাদী মাটন বিরিয়ানী! কি, একদিন রান্না করবেন তো?
সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।